নিউটনের গতিসূত্র
আইজাক নিউটনের গতিসূত্রগুলো হল প্রকৃতির তিনটি নিয়ম, যা চিরায়ত বলবিদ্যার ভিত্তি স্বরূপ।এই নিয়ম গুলো বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং তার দরূন সৃস্ট গতির মধ্যে সম্পর্ক বর্ননা করে। প্রায় তিন শতাব্দির বেশি সময় ধরে এই নিয়মগুলো নানাভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে। সূত্র তিনটি হল:
প্রথম সূত্র:
বাহ্যিক কোন বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থির এবং গতিশীল বস্তু সুষম গতিতে সরল পথে চলতে থাকে।
সুতরাং, কোন বস্তর উপর নিট বলের পরিমাণ শূন্য হলে, বস্তর ভরকেন্দ্র হয় স্থির নয়তো সমবেগে গতিশীল থাকবে।
দ্বিতীয় সূত্র:
কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকেই ঘটে।
সুতরাং m ভরের একটি বস্তুর উপর F বল প্রয়োগের ফলে তার ত্বরণ হয়, এই ত্বরণের মান বলের সমানুপাতিক ও ভরের ব্যস্তানুপাতিক (F = ma) এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে ত্বরণও সেই দিকে হয়।
তৃতীয় সূত্র:
প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে৷
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কাজ হলো এমন একটি সম্পাদন যাতে বল প্রয়োগের ফলে কোন বস্তুর সরণ হয়। পদার্থ বিজ্ঞানে কাজের পরিমাপের একক হলো জুল। এক নিউটন পরিমাণ বল প্রয়োগে যদি এক কিলোগ্রাম বস্তুর এক মিটার সরণ হয় তবে সম্পাদিত কাজের পরিমাণ ১ জুল।
কাজের সাধারণ ধারণাঃ
দৈনন্দিন জীবনে কাজ সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা তার সাথে পদার্থবিজ্ঞানগত ধারণার বেশ পার্থক্য রয়েছে। যেমন কোন বস্তুকে দুহাতে আঁকড়ে উপরে তুলে আবার যেখান থেকে তোলা হলো সেখানে নামিয়ে রাখলে পদার্থবিজ্ঞান এর দৃষ্টিকোন থেকে কাজের পরিমাণ হবে শূন্য, অথচ নিত্যদিনকার ধারনামতে আমরা এটাকেও হয়ত কাজ বলব কারণ এর মাধ্যমে উত্তোলনকারী ক্লান্ত এবং ঘর্মাক্ত হয়ে পড়তে পারেন। পদার্থবিজ্ঞান এর ভাষায়, বল এবং বলের দিকে সরণ-এর উপাংশ-এর গুণফল হলো কাজ।
ক্ষমতাঃ
পদার্থবিজ্ঞানের পরিভাষায় একক সময়ে সম্পাদিত কাজের পরিমাণই ক্ষমতা। এস্আই একক পদ্ধতির পরিমাপে ক্ষমতার একক ওয়াট। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে (Watt)। বৈজ্ঞানিক জেমস ওয়াটের নামানুসারে ক্ষমতার একক "ওয়াট" স্থির করা হয়েছে। ১ সেকেণ্ড সময়ে ১ জুল পরিমাণ কাজ করার ক্ষমতা হলো ১ ওয়াট।[১] জেমস ওয়াট নিজে ক্ষমতার একক "অশ্ব শক্তি" স্থির করেছিলেন। ক্ষমতাকে এইভাবে হিসাব করা হয়ঃ
P = W/ t
যেখানে P হল ক্ষমতা, W হল কাজ এবং t হল সময়।
শক্তিঃ
পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় শক্তি বলতে কাজ করার সামর্থ্যকে বুঝায়। কাজ বা কার্য হচ্ছে বল(force) ও বলাভিমুখী সরণের(displacement) গুণফল। কৃতকাজের পরিমাণ দিয়েই শক্তি পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ বস্তুর শক্তি হচ্ছে ঐ বস্তু মোট যতখানি কাজ করতে পারে। সুতরাং কাজের একক ও শক্তির একক অভিন্ন - জুল।
১ জুল = ১ নিউটনХ ১ মিটার। শক্তি একটি অদিক রাশি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মহাকর্ষঃ
মহাকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যা দ্বারা সকল শারীরিক সংস্থা একে অপরকে আকর্ষণ করে। মাধ্যাকর্ষণ শারীরিক বস্তুসমূহে ওজন প্রদান করে এবং পতিত হবার সময় সোজা ভূমিতে পড়ার যুক্তি সৃষ্টি করে। আধুনিক পদার্থবিদ্যায়, মহাকর্ষ সবচেয়ে সঠিকভাবে আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব (আইনস্টাইন দ্বারা প্রস্তাবিত) দ্বারা বর্ণনা করা হয় যা দ্বারা স্থান-কাল এর বক্রতার একটি ফল হিসাবে মহাকর্ষকে অভিহিত করা হয়।
পদার্থবিজ্ঞানে মহাবিশ্বের বস্তুসমূহের মধ্যে পারস্পারিক আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বলা হয়। প্রকৃতির চারটি মৌলিক বলের একটি হল মহাকর্ষ [১]। স্যার আইজ্যাক নিউটন সর্বপ্রথম মহাকর্ষ বলের গাণিতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এটি নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র নামে পরিচিত।
অভিকর্ষঃ
অভিকর্ষ হলো পৃথিবীর মহাকর্ষ বল। পৃথিবী এবং অন্য একটি বস্তুকণার মধ্যকার আকর্ষন বলকে অভিকর্ষ বল হয়ে থাকে। এ মহাবিশ্বের যে কোনো দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ তাই মহাকর্ষ। দুটি বস্তুর একটি যদি পৃথিবী হয় এবং পৃথিবী যদি বস্তুটিকে আকর্ষণ করে তবে তাকে মাধ্যাকর্ষণ বা অভিকর্ষ বলে। অর্থাৎ কোনো বস্তুর উপর পৃথিবীর আকর্ষণই অভিকর্ষ। গাছের ফল মাটিতে পড়ে। ক্রিকেট বলকে উপর দিকে ছুড়ে দিলে মাটিতে পড়ে। এখানে পৃথিবী যেমন ফল বা ক্রিকেট বলকে আকর্ষণ করে তেমনি এরাও পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। পৃথিবী অনেক বড় এবং এর আকর্ষণ বল অনেক বেশি হওয়ায় ফল ও ক্রিকেট বল মাটিতে পড়ে। পৃথিবী এবং অন্য যে কোনো বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ তাকে অভিকর্ষ বলে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
১৮৪১ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী ডঃ জেমস প্রেস্কট জুল তাপ সম্পর্কিত একটি সূত্র উদ্ভাবন করেন, যা জুলের সূত্র নামে পরিচিত হয়।
যদি তাপকে H, কারেন্টকে I, রেজিস্ট্যান্সকে R এবং সময় কে t দিয়ে প্রকাশ করা হয়, তবে গানিতিক ভাবে লেখা যায়ঃ
১. H α I2, যখন R এবং t ধ্রুব
২. H α R, যখন I এবং t ধ্রুব
৩. H α t, যখন I এবং R ধ্রুব
অতএব, H α I2Rt
বা H=I2RT/J এখনে, J = 4200 জুল/কিলো ক্যালোরি মেকানিক্যাল ইকুভেলেন্ট অফ হিট (সমানুপাতিক ধ্রুবক)
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বৃটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল ১৮৭৩ সালে কর্ক-স্ক্রুর সাহায্যে চুম্বক বলরেখার দিক নির্ণয়ের সূত্র বের করেন।
পরিবাহীর যেদিকে কারেন্ট প্রবাহিত হয়, সে দিকে ডান হাতে কর্ক-স্ক্রুকে ঘুরালে বৃদ্ধাঙ্গুলি যেদিকে ঘুরে সেদিকে চুম্বক বলরেখার দিক নির্দেশ করবে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনী এবং মধ্যমাকে পরস্পর সমকোণে রেখে বিস্তৃত করলে, তর্জনী চুম্বক বলরেখার দিক ও মধ্যমা কারেন্টের দিক নির্দেশ করলে, বৃদ্ধাঙ্গুলি পরিবাহী তারের ঘূর্ণন দিক নির্দেশ করবে।
এই সূত্রের সাহায্যে মোটরের ঘূর্ণন দিক বের করা যায়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
শব্দ হলো এক ধরনের তরঙ্গ যা পদার্থের কম্পনের ফলে সৃষ্টি হয়। মানুষের কানে এই কম্পন ধৃত হলে শ্রুতির অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এই তরঙ্গ বায়বীয়, তরল এবং কঠিন পদার্থের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় বাতাসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শব্দের গতবেগ ঘণ্টায় ৭৬৮.১ মাইল তথা প্রতি সেকেন্ড ৩৪৩.৪ মিটার। পদার্থের মধ্য দিয়ে শব্দ তরঙ্গ প্রবাহিত হওয়ার সময় ঐ পদার্থের সকল কণা স্পন্দিত হতে থাকে। প্রতি সেকেণ্ড একবার স্পন্দনকে বলা হয় ১ হার্জ। সকল স্পন্দন মানুষের কানে ধরা পড়ে না তথা শ্রুতির অনুভূতি সৃষ্টি করে না। সাধারণভাবে মানুষের কানে ২০ থেকে ২০,০০০ হার্জ স্পন্দনের শব্দ তরঙ্গ শ্রুত হয়।;পরিবেশের জন্য স্বাস্থ্যকর শব্দের তীব্রতা- ৬০ ডেসিবল| এই পরিধির কম হলে শব্দকে হলা হয় ইনফ্রা সাউন্ড এবং এর বেশী হলে বলা হয় আল্ট্রা সাউন্ড। কোন বস্তু শব্দের চেয়ে বেশী গতিতে বাতাসের মধ্য দিয়ে ধাবিত হলে তাকে বলা হয় সুপারসোনিক।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি পরিবাহীর রেজিস্ট্যান্স দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক, প্রস্থের বাস্তানুপাতিক এবং এর রেজিস্ট্যান্স পরিবাহি পদার্থের আপেক্ষিক রেজিস্ট্যান্সের উপর নির্ভর করে।
রেজিস্ট্যান্স R, প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল A এবং দৈর্ঘ্য L হলে,
R α L/A
বা, R = ρL/a এখানে, ρ= স্পেসিফিক রেজিস্ট্যান্স (সমানুপাতিক ধ্রুবক)
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মান বিজ্ঞানী ড: জর্জ সাইমন ওহম কারেন্ট, ভোল্টেজ এবং রেজিস্ট্যান্সের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করেন, এ সম্পর্কই ওহমের সূত্র (Ohm's Law) নামে পরিচিত।
কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে সুষম উষ্ণতায় প্রবাহিত কারেন্ট ঐ পরিবাহীর দুপ্রান্তের ভোল্টেজের সমানুপাতিক।
অথবা
কোন পরিবাহির ভিতর দিয়ে স্থির তাপমাত্রায় প্রবাহিত কারেন্ট ঐ পরিবাহির দুপ্রান্তের বিভব পার্থক্যের সমানপাতিক এবং রেজিস্ট্যান্সের বাস্তানুপাতিক।
ওহমের সূত্র মতে, কোন পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য V এবং প্রবাহিত কারেন্ট I হলে,
V α I
বা, V = IR এখানে, R = পরিবাহীর রেজিস্ট্যান্স (সমানুপাতিক ধ্রুবক)
ওহমের সূত্রের সীমাবদ্ধতা:
ওহমের সূত্রকে যদিও ইলেকট্রিসিটির গুরু বলে মানা হয়, এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে
১. ওহমের সূত্র DC এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, AC এর ক্ষেত্রে নয়।
২. তাপমাত্রা পরিবর্তন হলে ওহমের সূত্র প্রযোজ্য নয়।
৩. তাপমাত্রা স্থির থাকলেও সিলিকন কার্বাইডের ক্ষেত্রে ওহমের সূত্র প্রযোজ্য নয়।
৪. জটিল সার্কিট সমূহ ওহমের সূত্রের সাহায্যে সমাধান করা যায় না।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রথম সূত্র:
একই ধরণের চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে এবং বিপরীত ধর্মী চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে।
দ্বিতীয় সূত্র:
দুইটি বিন্দু চার্জের মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল চার্জ দুইটির পরিমাণের গুণফলের সমানুপাতিক এবং এদের মধ্যে দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।
দুটি বিন্দু চার্জের পরিমাণ যথাক্রমে Q1 ও Q2, এদের মধ্যকার দূরত্ব d হলে,
বল F α Q1Q2/d2
বা, F = k F α Q1Q2/d2 এখানে, K = 9X109 [ধ্রুবক]
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কারশফের কারেন্ট সূত্র :
একটি সার্কিটের কোন বিন্দুতে মিলিত কারেন্ট সমুহের বীজগাণিতিক যোগফল সমান।
অথবা
একটি সার্কিটের কোন বিন্দুতে আগত কারেন্ট ও নির্গত কারেন্ট সমান।
কারশফের ভোল্টেজ সূত্র :
কোন বদ্ধ বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্কের সকল ই.এম.এফ এবং সকল ভোল্টেজ ড্রপের বীজগাণিতিক যোগফল শূন্য।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
লেনজ এর সুত্র একটি সহজ উপায় যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কিভাবে তড়িৎ চুম্বকীয় বর্তনী নিউটনের ৩য় সুত্র এবং শক্তির সংরক্ষণ সুত্র মেনে চলে । লেনজ এর সুত্র হেনরিক লেনজ এর নামানুসারে করা হয়েছে।এতে বলা হয়
একটি প্রবর্তিত তড়িচ্চালক বল সব সময় তড়িৎকে বৃদ্ধি করে যার চুম্বকীয় ক্ষেত্র প্রকৃত চুম্বক প্রবাহের বিরোধিতা করে ।
আইজাক নিউটনের গতিসূত্রগুলো হল প্রকৃতির তিনটি নিয়ম, যা চিরায়ত বলবিদ্যার ভিত্তি স্বরূপ।এই নিয়ম গুলো বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং তার দরূন সৃস্ট গতির মধ্যে সম্পর্ক বর্ননা করে। প্রায় তিন শতাব্দির বেশি সময় ধরে এই নিয়মগুলো নানাভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে। সূত্র তিনটি হল:
প্রথম সূত্র:
বাহ্যিক কোন বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থির এবং গতিশীল বস্তু সুষম গতিতে সরল পথে চলতে থাকে।
সুতরাং, কোন বস্তর উপর নিট বলের পরিমাণ শূন্য হলে, বস্তর ভরকেন্দ্র হয় স্থির নয়তো সমবেগে গতিশীল থাকবে।
দ্বিতীয় সূত্র:
কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকেই ঘটে।
সুতরাং m ভরের একটি বস্তুর উপর F বল প্রয়োগের ফলে তার ত্বরণ হয়, এই ত্বরণের মান বলের সমানুপাতিক ও ভরের ব্যস্তানুপাতিক (F = ma) এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে ত্বরণও সেই দিকে হয়।
তৃতীয় সূত্র:
প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে৷
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি
কাজঃ
কাজ হলো এমন একটি সম্পাদন যাতে বল প্রয়োগের ফলে কোন বস্তুর সরণ হয়। পদার্থ বিজ্ঞানে কাজের পরিমাপের একক হলো জুল। এক নিউটন পরিমাণ বল প্রয়োগে যদি এক কিলোগ্রাম বস্তুর এক মিটার সরণ হয় তবে সম্পাদিত কাজের পরিমাণ ১ জুল।
কাজের সাধারণ ধারণাঃ
দৈনন্দিন জীবনে কাজ সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা তার সাথে পদার্থবিজ্ঞানগত ধারণার বেশ পার্থক্য রয়েছে। যেমন কোন বস্তুকে দুহাতে আঁকড়ে উপরে তুলে আবার যেখান থেকে তোলা হলো সেখানে নামিয়ে রাখলে পদার্থবিজ্ঞান এর দৃষ্টিকোন থেকে কাজের পরিমাণ হবে শূন্য, অথচ নিত্যদিনকার ধারনামতে আমরা এটাকেও হয়ত কাজ বলব কারণ এর মাধ্যমে উত্তোলনকারী ক্লান্ত এবং ঘর্মাক্ত হয়ে পড়তে পারেন। পদার্থবিজ্ঞান এর ভাষায়, বল এবং বলের দিকে সরণ-এর উপাংশ-এর গুণফল হলো কাজ।
ক্ষমতাঃ
পদার্থবিজ্ঞানের পরিভাষায় একক সময়ে সম্পাদিত কাজের পরিমাণই ক্ষমতা। এস্আই একক পদ্ধতির পরিমাপে ক্ষমতার একক ওয়াট। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে (Watt)। বৈজ্ঞানিক জেমস ওয়াটের নামানুসারে ক্ষমতার একক "ওয়াট" স্থির করা হয়েছে। ১ সেকেণ্ড সময়ে ১ জুল পরিমাণ কাজ করার ক্ষমতা হলো ১ ওয়াট।[১] জেমস ওয়াট নিজে ক্ষমতার একক "অশ্ব শক্তি" স্থির করেছিলেন। ক্ষমতাকে এইভাবে হিসাব করা হয়ঃ
P = W/ t
যেখানে P হল ক্ষমতা, W হল কাজ এবং t হল সময়।
শক্তিঃ
পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় শক্তি বলতে কাজ করার সামর্থ্যকে বুঝায়। কাজ বা কার্য হচ্ছে বল(force) ও বলাভিমুখী সরণের(displacement) গুণফল। কৃতকাজের পরিমাণ দিয়েই শক্তি পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ বস্তুর শক্তি হচ্ছে ঐ বস্তু মোট যতখানি কাজ করতে পারে। সুতরাং কাজের একক ও শক্তির একক অভিন্ন - জুল।
১ জুল = ১ নিউটনХ ১ মিটার। শক্তি একটি অদিক রাশি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ (Gravitation)
মহাকর্ষঃ
মহাকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যা দ্বারা সকল শারীরিক সংস্থা একে অপরকে আকর্ষণ করে। মাধ্যাকর্ষণ শারীরিক বস্তুসমূহে ওজন প্রদান করে এবং পতিত হবার সময় সোজা ভূমিতে পড়ার যুক্তি সৃষ্টি করে। আধুনিক পদার্থবিদ্যায়, মহাকর্ষ সবচেয়ে সঠিকভাবে আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব (আইনস্টাইন দ্বারা প্রস্তাবিত) দ্বারা বর্ণনা করা হয় যা দ্বারা স্থান-কাল এর বক্রতার একটি ফল হিসাবে মহাকর্ষকে অভিহিত করা হয়।
পদার্থবিজ্ঞানে মহাবিশ্বের বস্তুসমূহের মধ্যে পারস্পারিক আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বলা হয়। প্রকৃতির চারটি মৌলিক বলের একটি হল মহাকর্ষ [১]। স্যার আইজ্যাক নিউটন সর্বপ্রথম মহাকর্ষ বলের গাণিতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এটি নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র নামে পরিচিত।
অভিকর্ষঃ
অভিকর্ষ হলো পৃথিবীর মহাকর্ষ বল। পৃথিবী এবং অন্য একটি বস্তুকণার মধ্যকার আকর্ষন বলকে অভিকর্ষ বল হয়ে থাকে। এ মহাবিশ্বের যে কোনো দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ তাই মহাকর্ষ। দুটি বস্তুর একটি যদি পৃথিবী হয় এবং পৃথিবী যদি বস্তুটিকে আকর্ষণ করে তবে তাকে মাধ্যাকর্ষণ বা অভিকর্ষ বলে। অর্থাৎ কোনো বস্তুর উপর পৃথিবীর আকর্ষণই অভিকর্ষ। গাছের ফল মাটিতে পড়ে। ক্রিকেট বলকে উপর দিকে ছুড়ে দিলে মাটিতে পড়ে। এখানে পৃথিবী যেমন ফল বা ক্রিকেট বলকে আকর্ষণ করে তেমনি এরাও পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। পৃথিবী অনেক বড় এবং এর আকর্ষণ বল অনেক বেশি হওয়ায় ফল ও ক্রিকেট বল মাটিতে পড়ে। পৃথিবী এবং অন্য যে কোনো বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ তাকে অভিকর্ষ বলে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
জুলের সূত্র (Joules Law)
১৮৪১ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী ডঃ জেমস প্রেস্কট জুল তাপ সম্পর্কিত একটি সূত্র উদ্ভাবন করেন, যা জুলের সূত্র নামে পরিচিত হয়।
যদি তাপকে H, কারেন্টকে I, রেজিস্ট্যান্সকে R এবং সময় কে t দিয়ে প্রকাশ করা হয়, তবে গানিতিক ভাবে লেখা যায়ঃ
১. H α I2, যখন R এবং t ধ্রুব
২. H α R, যখন I এবং t ধ্রুব
৩. H α t, যখন I এবং R ধ্রুব
অতএব, H α I2Rt
বা H=I2RT/J এখনে, J = 4200 জুল/কিলো ক্যালোরি মেকানিক্যাল ইকুভেলেন্ট অফ হিট (সমানুপাতিক ধ্রুবক)
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ম্যাক্সওয়েল কর্ক-স্ক্রু রুল (Maxwell Cork Screw Rule)
বৃটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল ১৮৭৩ সালে কর্ক-স্ক্রুর সাহায্যে চুম্বক বলরেখার দিক নির্ণয়ের সূত্র বের করেন।
পরিবাহীর যেদিকে কারেন্ট প্রবাহিত হয়, সে দিকে ডান হাতে কর্ক-স্ক্রুকে ঘুরালে বৃদ্ধাঙ্গুলি যেদিকে ঘুরে সেদিকে চুম্বক বলরেখার দিক নির্দেশ করবে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ফ্লেমিং এর লেফট হ্যান্ড রুল (Fleming’s Left Hand Rule)
বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনী এবং মধ্যমাকে পরস্পর সমকোণে রেখে বিস্তৃত করলে, তর্জনী চুম্বক বলরেখার দিক ও মধ্যমা কারেন্টের দিক নির্দেশ করলে, বৃদ্ধাঙ্গুলি পরিবাহী তারের ঘূর্ণন দিক নির্দেশ করবে।
এই সূত্রের সাহায্যে মোটরের ঘূর্ণন দিক বের করা যায়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
শব্দ
শব্দ হলো এক ধরনের তরঙ্গ যা পদার্থের কম্পনের ফলে সৃষ্টি হয়। মানুষের কানে এই কম্পন ধৃত হলে শ্রুতির অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এই তরঙ্গ বায়বীয়, তরল এবং কঠিন পদার্থের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় বাতাসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শব্দের গতবেগ ঘণ্টায় ৭৬৮.১ মাইল তথা প্রতি সেকেন্ড ৩৪৩.৪ মিটার। পদার্থের মধ্য দিয়ে শব্দ তরঙ্গ প্রবাহিত হওয়ার সময় ঐ পদার্থের সকল কণা স্পন্দিত হতে থাকে। প্রতি সেকেণ্ড একবার স্পন্দনকে বলা হয় ১ হার্জ। সকল স্পন্দন মানুষের কানে ধরা পড়ে না তথা শ্রুতির অনুভূতি সৃষ্টি করে না। সাধারণভাবে মানুষের কানে ২০ থেকে ২০,০০০ হার্জ স্পন্দনের শব্দ তরঙ্গ শ্রুত হয়।;পরিবেশের জন্য স্বাস্থ্যকর শব্দের তীব্রতা- ৬০ ডেসিবল| এই পরিধির কম হলে শব্দকে হলা হয় ইনফ্রা সাউন্ড এবং এর বেশী হলে বলা হয় আল্ট্রা সাউন্ড। কোন বস্তু শব্দের চেয়ে বেশী গতিতে বাতাসের মধ্য দিয়ে ধাবিত হলে তাকে বলা হয় সুপারসোনিক।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রেজিস্ট্যান্সের সূত্র (Resistance Law)
একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি পরিবাহীর রেজিস্ট্যান্স দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক, প্রস্থের বাস্তানুপাতিক এবং এর রেজিস্ট্যান্স পরিবাহি পদার্থের আপেক্ষিক রেজিস্ট্যান্সের উপর নির্ভর করে।
রেজিস্ট্যান্স R, প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল A এবং দৈর্ঘ্য L হলে,
R α L/A
বা, R = ρL/a এখানে, ρ= স্পেসিফিক রেজিস্ট্যান্স (সমানুপাতিক ধ্রুবক)
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ওহমের সূত্র (Ohm’s Law)
মান বিজ্ঞানী ড: জর্জ সাইমন ওহম কারেন্ট, ভোল্টেজ এবং রেজিস্ট্যান্সের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করেন, এ সম্পর্কই ওহমের সূত্র (Ohm's Law) নামে পরিচিত।
কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে সুষম উষ্ণতায় প্রবাহিত কারেন্ট ঐ পরিবাহীর দুপ্রান্তের ভোল্টেজের সমানুপাতিক।
অথবা
কোন পরিবাহির ভিতর দিয়ে স্থির তাপমাত্রায় প্রবাহিত কারেন্ট ঐ পরিবাহির দুপ্রান্তের বিভব পার্থক্যের সমানপাতিক এবং রেজিস্ট্যান্সের বাস্তানুপাতিক।
ওহমের সূত্র মতে, কোন পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য V এবং প্রবাহিত কারেন্ট I হলে,
V α I
বা, V = IR এখানে, R = পরিবাহীর রেজিস্ট্যান্স (সমানুপাতিক ধ্রুবক)
ওহমের সূত্রের সীমাবদ্ধতা:
ওহমের সূত্রকে যদিও ইলেকট্রিসিটির গুরু বলে মানা হয়, এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে
১. ওহমের সূত্র DC এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, AC এর ক্ষেত্রে নয়।
২. তাপমাত্রা পরিবর্তন হলে ওহমের সূত্র প্রযোজ্য নয়।
৩. তাপমাত্রা স্থির থাকলেও সিলিকন কার্বাইডের ক্ষেত্রে ওহমের সূত্র প্রযোজ্য নয়।
৪. জটিল সার্কিট সমূহ ওহমের সূত্রের সাহায্যে সমাধান করা যায় না।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কুলম্বের সূত্র (Coulomb’s Law)
প্রথম সূত্র:
একই ধরণের চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে এবং বিপরীত ধর্মী চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে।
দ্বিতীয় সূত্র:
দুইটি বিন্দু চার্জের মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল চার্জ দুইটির পরিমাণের গুণফলের সমানুপাতিক এবং এদের মধ্যে দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।
দুটি বিন্দু চার্জের পরিমাণ যথাক্রমে Q1 ও Q2, এদের মধ্যকার দূরত্ব d হলে,
বল F α Q1Q2/d2
বা, F = k F α Q1Q2/d2 এখানে, K = 9X109 [ধ্রুবক]
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কারশফের সূত্র (Kirchhoff’s Law)
কারশফের কারেন্ট সূত্র :
একটি সার্কিটের কোন বিন্দুতে মিলিত কারেন্ট সমুহের বীজগাণিতিক যোগফল সমান।
অথবা
একটি সার্কিটের কোন বিন্দুতে আগত কারেন্ট ও নির্গত কারেন্ট সমান।
কারশফের ভোল্টেজ সূত্র :
কোন বদ্ধ বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্কের সকল ই.এম.এফ এবং সকল ভোল্টেজ ড্রপের বীজগাণিতিক যোগফল শূন্য।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
লেন্জের সূত্র ( Lenz’s law)
লেনজ এর সুত্র একটি সহজ উপায় যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কিভাবে তড়িৎ চুম্বকীয় বর্তনী নিউটনের ৩য় সুত্র এবং শক্তির সংরক্ষণ সুত্র মেনে চলে । লেনজ এর সুত্র হেনরিক লেনজ এর নামানুসারে করা হয়েছে।এতে বলা হয়
একটি প্রবর্তিত তড়িচ্চালক বল সব সময় তড়িৎকে বৃদ্ধি করে যার চুম্বকীয় ক্ষেত্র প্রকৃত চুম্বক প্রবাহের বিরোধিতা করে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন