রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫

স্তন ক্যান্সার এবং বাংলাদেশ


                 

                     

বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ক্যান্সার মহামারি। বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষ। স্তন ক্যান্সার মারাত্মকভাবে ছড়াচ্ছে পৃথিবীতে। এটি নারী ও পুরুষের হয়ে থাকে।  নারী হয়ে জন্ম নেওয়াই স্তন ক্যানসারের একটি ঝুঁকি। তাই প্রত্যেক নারীই স্তন ক্যানসারের ঝুঁকির মধ্যেবসবাস করেন। বিশ্বে প্রতি ১৬ জন নারীর একজনের জীবনের যেকোনো সময় স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। উন্নত বিশ্বে তো বটেই, বাংলাদেশের নারীরাও এইঝুঁকির বাইরে নন। তাই এখনই সময় সচেতন হওয়ার ও রোগপ্রতিরোধের। আর অন্য সব রোগের মতোই এখানেও সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো, দেরিতে রোগ শনাক্ত হওয়া এবং এ কারণে চিকিৎসা গ্রহণে পিছিয়ে পড়া। তাই বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক স্ক্রিনিং সিস্টেম।গড়ে উঠছে একই সেন্টারে একাধিক সেবা মেলে এমন মাল্টিডিসিপ্লিনারি ডায়াগনস্টিক টিম, যেখানে একাত্ম হবেন রেডিওলজিস্ট, প্যাথলজিস্ট, ব্রেস্ট অনকোলজিস্ট, ব্রেস্টসার্জন, রেডিওথেরাপিস্ট—সবাই। গড়ে উঠেছে নারীদের জন্য ভয়ানক এই ঘাতককে রোখার ও এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, গাইডলাইন ও সরকারি আইনকানুন। আর যথারীতি এখানেও আমরা যথেষ্ট পরিমাণেই পিছিয়ে।
দ্রুত ও সময়ানুগ রোগনির্ণয়ে সফলতাই স্তন ক্যানসার চিকিৎসার মূল চাবিকাঠি। এ জন্য সবার আগে চাই নারীরসচেতনতা। ৩৫ বছর পার হয়ে গেলেই নিজের স্তন সম্পর্কে সচেতন হতে হবে প্রত্যেক নারীকে। নিজেকে নিজে পরীক্ষা করা এবং স্তন ক্যানসারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সম্যক অবহিত থাকা হচ্ছে এই সচেতনতার প্রথম ধাপ। জেনে নেওয়া দরকার স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিগুলো সম্পর্কেও। পরিবারে কারও স্তন ক্যানসারের ইতিহাস, অত্যধিক ওজন, মন্দ খাদ্যাভ্যাস, হরমোন ট্যাবলেট সেবনের ইতিহাস, মাসিকের ইতিহাস—এগুলো জানা জরুরি। এর আগে স্তনে কোনো সমস্যা হয়েছিল কি না বা কোনো পরীক্ষা, যেমন—ম্যামোগ্রাফি করা হয়েছিল কি না। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়।এরপর দরকার একটি সার্বিক ক্লিনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট।স্তনে যেকোনো সমস্যা বা সন্দেহজনক পরিবর্তনে প্রথমেই শরণাপন্ন হতে হবে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের। তিনি পূর্ণ ইতিহাস জানার পাশাপাশি আপনাকে বসিয়ে এবং শুইয়ে দুবার পরিপূর্ণভাবে দুটি স্তন ও দুটি বগল পরীক্ষা করবেন। যেকোনো সন্দেহজনক পরিবর্তন দেখলে তিনি শরণাপন্নহবেন ল্যাবরেটরি পরীক্ষার।

1. প্রথমেই আসে ব্রেস্ট ইমেজিং। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যেম্যামোগ্রাফি ও আলট্রাসাউন্ড—এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ।ম্যামোগ্রাফি হচ্ছে স্তনের এক ধরনের বিশেষ এক্স-রে,যাতে সচরাচর ব্যবহূত এক্স-রের তুলনায় কম তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহার করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে ম্যামোগ্রাফি স্তন ক্যানসারের জন্য একটি শক্তিশালী ও বহুল ব্যবহূত স্ক্রিনিং পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। ৪০-পরবর্তী নারীদের নিয়মিত বার্ষিক ম্যামোগ্রাফির আওতায় আনা হয়েছে অনেক দেশে। তবে কম বয়সী নারী, যাঁদের স্তনগ্রন্থি আঁটোসাঁটো থাকে এবং গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা, যাঁদের তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহারে বিধিনিষেধ আছে,তাঁদের জন্য ম্যামোগ্রাফির বদলে আলট্রাসাউন্ড শ্রেয়তর। কেননা, এতে তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহার করা হয় না। তবে সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে ৩৫-ঊর্ধ্ব নারীদের জন্য একই সঙ্গে ম্যামোগ্রাফি ও আলট্রাসাউন্ড সবচেয়ে ভালো ধারণা দিতে সক্ষম। তবে লক্ষ রাখবেন, দুটি পরীক্ষাই যেন একই সময়ে বা কাছাকাছি সময়ে করা হয়, যা তুলনাযোগ্য হতে পারে। স্তনের জন্য হাই ফ্রিকোয়েন্সি লিনিয়ার প্রোব আলট্রাসাউন্ড রোগনির্ণয়ে বেশি কার্যকর।

2. বায়োপসি বিভিন্ন ধরনের হয়। চাকা বা পিণ্ড কত বড় ও কোথায় অবস্থিত, তার ওপর নির্ভর করে কোনটি ব্যবহার করা হবে। যেমন—কোর বায়োপসি হচ্ছে এমন একটি আধুনিক পদ্ধতি, যেখানে একটি সূক্ষ্ম সুচের (নিডল গান) মাধ্যমে চাকা বা পিণ্ড থেকে খানিকটা টিস্যু এনে দেখা হয় তার অস্বাভাবিকতা। সময় লাগে ১৫ মিনিট। এ সময় নির্ভুল জায়গায় পৌঁছাতে আলট্রাসাউন্ডের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। অপরদিকে কোনো চাকা চামড়ার বা স্তনবৃন্তের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে আটকে থাকলে বা চামড়ায় কোনো ক্ষত বা ঘা থাকলে পাঞ্চ বায়োপসি করতে হয়। একজন দক্ষ প্যাথলজিস্ট এই বায়োপসি রিপোর্টটি করার সময় এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত মাত্রা বা স্কেল ব্যবহার করেন। রেডিওলজিস্টও একই সঙ্গে তাঁর ম্যামোগ্রাফি ও আলট্রাসাউন্ডের রিপোর্টের ক্ষেত্রে মাত্রা বা স্কেল ব্যবহার করবেন। আর যে চিকিৎসক রোগীকে দেখেছেন, তাঁর তো নিজস্ব ক্লিনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট আছেই। এই ত্রয়ী বিশেষজ্ঞ অবশেষে সামগ্রিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবেন রোগটি আসলে কী, তা কোন পর্যায়ে আছে এবং কোন ধরনের চিকিৎসা রোগীর প্রয়োজন। চিকিৎসকদের মতামতে গরমিলথাকলে প্রয়োজনে তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো পরীক্ষার পুনরাবৃত্তিও করতে পারেন বা আরও আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্য নিতে পারেন। বিশ্বে স্তন ক্যানসার নির্ণয়ের এই যুগপৎ প্রচেষ্টার নাম ট্রিপল অ্যাসেসমেন্ট বা ত্রয়ী পর্যবেক্ষণ নীতিমালা।

যদি ক্যানসার ধরা পড়ে, তবে তা স্তনের কতটুকু দখল করে আছে, অন্য স্তন বা আশেপাশের গ্রন্থিগুলোর অবস্থাকী, কতটুকু ক্ষতি হয়েছে এবং টিউমারের নিরাপদ সীমানা কতটুকু—এসব জটিল বিষয় বিবেচনায় এনে সার্জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। এত দিন স্তনের সার্জারি বলতে মাসটেকটমি (সম্পূর্ণ স্তন অপসারণ), র‌্যাডিকাল মাসটেকটমি (স্তনসহ গ্রন্থিগুলোর অপসারণ), ব্রেস্ট কনসার্ভি সার্জারি (স্তন সংরক্ষণ সার্জারি) প্রভৃতিকেই বোঝাত। কিন্তু এখন আধুনিক বিশ্বে চলে এসেছে অনকোপ্লাস্টিক টেকনিক, যার মাধ্যমে অকারণ বিকৃতি না করে, এমনকি তিন থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার আকারের টিউমারও নিরাপদে স্তন সংরক্ষণ করেই অপসারণ করা সম্ভব। এ ছাড়া সার্জারি ও রেডিওথেরাপির পর বিকৃতি রোধ করতে বলিউম রিপ্লেসমেন্ট সার্জারির সাহায্য নেওয়া হয়। তবে আধুনিক অনকোপ্লাস্টিক টেকনিক একই সঙ্গে ক্যানসার অপসারণ ও রিকনস্ট্রাকশন বা বিকৃতি রোধের সুযোগ এনে দিয়েছে।
সংকোচ ও অবহেলা নারীকে নিজের স্তন বিষয়ে কুণ্ঠিত করে রাখে। নিজের সমস্যাগুলো গোপন করা, প্রকাশ করতে দেরি করা বা প্রকাশ করলেও তা পরিবার ও পারিপার্শ্বিক ব্যবস্থায় আমলে না আসার চক্র নারীকে ঠেলে দেয় নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে। যে রোগের চিকিৎসা আশাপ্রদ ও সহজলভ্য, সে রোগটি ভয়ংকর ঘাতকরূপে দেখা দেয়। তাই স্তন ক্যানসার ঠেকানোর প্রথম পদক্ষেপই হলো সচেতনতা। নারীরানিজের সম্পর্কে নিজে সচেতন হোন, পরিবারের নারী সম্পর্কে অন্য সবাই সচেতন হোন, সর্বোপরি দেশের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা নারীর সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়েসচেতন হোক—এটাই আমার আশা।

মনে রাখুন উপসর্গগুলো :::::::

*স্তনে কোনো চাকা বা পিণ্ড দেখা দিলে:
*গোসলের সময় মাসে অন্তত একবার হাত দিয়ে স্তন ও বগল পরীক্ষা করার সময় যদি হাতে কোনো চাকা অনুভব করা যায়,যা আগে কখনো ছিল না।
*এর আগে স্তনে টিউমারের চিকিৎসা হয়েছে—এমন কারও নতুন করে আবার কোথাও চাকা দেখা দিলে।
*চাকাটি খুব দ্রুত বড় হতে থাকলে।
*চাকাটি যদি স্তনের চামড়া বা স্তনবৃন্তের সঙ্গে ঘনভাবে সন্নিবেশিত থাকে।
*দুই স্তনের আকার ও আকৃতিতে অস্বাভাবিক গরমিল দেখা দিলে।
*পর পর দুটি মাসিকের পরও স্তনের চাকা চাকা ভাব অনুভূত হতে থাকলে।
*স্তনের সিস্ট ঘন ঘন দেখা দিলে।
*ফোঁড়া বারবার হতে থাকলে।
*স্তনে ব্যথা
*শুধু ব্যথা কোনো দুশ্চিন্তার বিষয় নয়, কিন্তু এর সঙ্গে চাকা, বিকৃতি বা যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
*মেনোপজের পর কোনো নারীর এক পাশে অস্বাভাবিক ও স্থায়ী ব্যথা।
*যে তীব্র ব্যথা সাপোর্টিভ ব্রা বা ব্যথানাশক খেলেও দূর হচ্ছে না।
*স্তনবৃন্তের অস্বাভাবিকতা
*স্তনবৃন্ত থেকে রক্তক্ষরণ।
*দীর্ঘস্থায়ী অ্যাকজিমা বা ক্ষত।
*স্তনবৃন্ত ভেতর দিকে ঢুকে যাওয়া, দেবে যাওয়া বা একপাশে সরে যাওয়া।
*যেকোনো বয়সে বৃন্ত থেকে নিঃসৃত ক্ষরণ সর্বদা কাপড়ে লেগে থাকা।
*বগলের অস্বাভাবিকতা
*বগলে কোনো চাকা বা পিণ্ড অনুভূত হওয়া।

(লেখায় অনেক ভুলত্রুটি থাকতে পারে ক্ষমা করবেন।।।।।)


শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫

বানর থেকে মানুষ নাকি মানুষ থেকে বানর

  • ""বানর থেকে মানুষ নাকি মানুষ থেকে বানর ""
  •  পুরাতন বিতর্কের নতুন যুক্তি 


পৃথিবীর বয়স আনুমানিক ৪০০০মিলিয়ন বছর।পৃথিবীতে সরল প্রাণীকোষের আবির্ভাব ঘটেছিল প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে।তবে এখানে আধুনিক মানুষের বসবাসের ইতিহাস মাত্র দুই লাখ বছরের। এতে স্পষ্ট যে বুদ্ধিমান প্রাণের বিকাশের জন্য অনেক লম্বা সময় প্রয়োজন পরেছে।আর এরও দুই কোটি বছর আগে উৎপত্তি ঘটে বানরের।ধারনা করা হয় বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বানর থেকে মানুষ হতে সময় লেগেছে প্রায় দুই কোটি বছর।
এই বিবর্তন বাদের ব্যাখ্যা একটু অন্য ধরনেরছোটবেলায় যখন বিবর্তন প্রথম
জানতে পারলাম
আমাদেরকে এভাবে বুঝানো হল..
একটা গাছ ছিল এ রকম  যার ফল পানিতে
পড়লে হাঁস, ডাংগায় পড়লে মেষ,আর পড়ার
আগে অংকুরিত হলে বকে পরিণত হত। একইভাবে..... 
বানররা গাছে গাছে ঝুলত আর
লাফিয়ে লাফিয়ে একডাল
থেকে আরেকডালে যেত।
এভাবে লাফাতে লাফাতে একদিন
হাত ফসকে নিচে পড়ে যায়।
মাটিতে পড়ে গিয়ে দেখল
হাটাচলা করাও খুব একটা মন্দ না। তাই
মাঝেমাঝে সে এই প্রাকটিস
করতে থাকল। দুই পা দিয়ে হাটার
কারনে তার লেজ
মাটিতে ঘষা খেতে খেতে ক্ষয়
হতে লাগল। আর এভাবে ক্ষয়
হতে হতে সে একদিন লেজ বিহীন
মানুষে পরিনত হয়ে গেল।এ কথা বলার কারন হচ্ছে আদি মানবের(বন মানুষ)
পায়ের গোড়ালির হাড় ছিল বাকা। যা হাটাচলার পরিবর্তে গাছে উঠবার উপযোগী ছিল।
যা বানরের বৈশিষ্ট্যময়।
কিন্তু বিজ্ঞান এবং ধর্মকি এই থিওরকে বিশ্বাস কর আসুন জেনে নেই,,,,,,
প্রথমে বিজ্ঞান দিয়েই চিন্তা করা যাক।
চার্লস ডারউইনের Origin of species by means
of natural selection থিওরি আজ
প্রানীবিজ্ঞানী, জীনগবেষক ও
বিবর্তন গবেষকদের কাছে অনেকটাই
গ্রহনযোগ্য মতবাদ।
বিশেষ করে DNA Sequence শুরু হবার পর
থেকে বিজ্ঞানীরা অনেকটাই
নিশ্চন্ত যে বিবর্তনের মাধ্যমেই
পৃথিবীতে বিচিত্র সব প্রানীকুলের
উদ্ভব হয়েছে। যার মধ্যে পৃথিবীর
সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রানী মানুষও
অন্তর্ভুক্ত।
ধারনা করা হয় যে সকল চার হাত
পা বিশিষ্ট প্রানীর
উৎপত্তি হয়েছে মাছ থেকে। বিবর্তনের
এই ধারাবাহিকতায়
বর্তমানে বৈশিষ্ট্যগত দিক
থেকে মানুষের নিকটবর্তী প্রানী হল
শিম্পাঞ্জী বা বানর। কিন্তু মাছ থেকেই উৎপত্তি ঘটেছে মানুষের। তাহলে
কিভাবে??
ধারনা করা হয় ৩৫০ মিলিয়ন বছর
আগে মাছ একধরনের প্রেডিয়েটরের
অাক্রমনের শিকার হয়। সেই অাক্রমন
থেকে বাঁচতে ও নিজেদের অস্তিত্ব
রক্ষার্থে তারা বাধ্য হয় জলভাগ
ছেড়ে স্হলভাগে অাশ্রয় নিতে।
ধাপেধাপে স্হলভাগে বসবাসের জন্য
তাদের ফুলকা বিবর্তনের বিভিন্ন
পর্যায় অতিক্রম
করে করে ফুসফুসে রূপান্তরিত হয়। সেই
সাথে স্হলভাগে চলাফেরার জন্য
তাদের হাত ও
পা গজিয়ে তারা স্হলভাগের
প্রানীতে রূপান্তরিত হয়।
তবে বিবর্তনবাদের সংঙ্গা টি হচ্ছে"ডারউইনের মতে প্রকৃতি এই পরিবর্তন
আনে যেন ঐ প্রানী সেই
পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। এটাই
বিবর্তনবাদ বা theory of evolution.
সেখান থেকেই বলা হয়েছে পৃথিবীর
সমস্ত চার হাত পা বিশিষ্ট
প্রানী এমনকি মানুষের
উৎপত্তি হয়েছে মাছ থেকে! তবে মাছ না বানর সন্দেহ থেকে যায় সকলের আর তা দুর করার জন্য ২০০৩ সালে যখন Human genome sequence
করা হল এবং তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট
প্রকাশ করা হল তখন
বিজ্ঞানীরা অারো বেশী অাশ্চর্ষ
হলেন। দেখা গেল শুধু
শিম্পাঞ্জি না এমনকি মুরগীর সাথেও
মানুষের জিনগত মিল রয়েছে।
যা মুটামুটি ভাবে বিতর্কিত একটি ঘটনা তবে কি মানব সৃষ্টিরহস্য জনা যাবে না কখনও।
হতাশ হওয়ার কারন নেই আসুন এবার বিবর্তনবাদের কথা বাদ দিয়ে দেখি পবিত্র কোরআন সহ অনান্য পবিত্র ধর্মগ্রন্থ সমূজে মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে কি বলা হয়েছে।
সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ﻛُﻞَّ ﺷَﻲْﺀٍ ﺣَﻲٍّ ‘আর প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হ’তে’ (আম্বিয়া ২১/৩০) ।
গবেষণায় দেখা যায় সাগরের অভ্যন্তরের পানিতে যে প্রোটোপ্লাজম বা জীবনের আদিম মূলীভূত উপাদান রয়েছে তা থেকেই সকল জীবের সৃষ্টি। আবার সকল জীবদেহ কোষ দ্বারা গঠিত। আর এই কোষ গঠনের মূল উপাদান হচ্ছে পানি।
মহান আল্লাহর ভাষায়, ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺇِﻧَّﺎ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎﻛُﻢْ ﻣِﻦْ ﺫَﻛَﺮٍ ﻭَﺃُﻧْﺜَﻰ ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻛُﻢْ ﺷُﻌُﻮْﺑًﺎ ﻭَﻗَﺒَﺎﺋِﻞَ ﻟِﺘَﻌَﺎﺭَﻓُﻮْﺍ ‘হে মানবমন্ডলী! আমরা তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদেরকে বিভিন্ন বংশ ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা পরস্পরে পরিচিতি লাভ করতে পার’ (হুজুরাত ৪৯/১৩) ।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে ‘মানব ক্লোন’। এই ক্লোন পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দিতে গেলে পুরুষের জীব কোষের প্রয়োজন। অর্থাৎ একজন পুরুষের জীব কোষ বা শুক্রাণু ব্যতীত একজন নারী সন্তান জন্ম দানে অক্ষম।
এছাড়াও হিন্দু ধর্মগ্রন্থ
ভ্রম্মাপুরানে বলা হয়েছে ভ্রম্মা (ভগবান)
মানব ও মানবীর আকৃতি প্রদান করেন।
নর
মানবকে বলা হয় স্বয়ম্ভু মানু আর
নারী স্বতরূপা। মানবকুলের
উৎপত্তি হয়েছে মানু থেকে।
Jewish Bible Genesis chapter 2:7 এবং chapter
1:26 এ বলা হয়েছে God তৈরী করলেন
মানব মাটি থেকে এবং তার
নাসিকাতে ফু দিলেন যার ফলে তার
মাঝে প্রানের উদ্ভব হল।
আরো বলা হয়েছে God নিজ
আকৃতিতে মানব সৃষ্টি করেছেন এবং জল,
বায়ু, স্হল ও পৃথিবীতে বিদ্যমান সমস্ত
প্রানীর উপর তাকে অাধিপত্য দান
করেছেন।
খ্রিষ্টীয় বাইবেল Corinthians chapter 15:22
& 15:45 একই ভাবে Adam এর
দেহে প্রানের সঞ্চারের
কথা বলা হয়েছে। তাছারা New
Testament এ Genesis এর chapter এর
উদৃত্তি দেয়া হয়েছে।
একইভাবে সর্বশেষ ধর্মগ্রন্থ আল
কোরআনের chapter 2:30-39, chapter 7:19-25,
chapter 20:116-126 এই সবগুলো chapter এ আরও
বিস্তারিত ভাবে মানুষের সৃষ্টি,
তাদের প্রথম অবস্থান ও
পৃথিবীতে অার্বিভাব
বর্ননা করা হয়েছে।
বিজ্ঞানের
কল্যানে আমরা জানি যে DNA এর
মাঝে লুকিয়ে আছে সব প্রানীকুলের
গঠনকৌশল যা মুলত চারটি বিশেষ
উপাদান দিয়ে তৈরী। মানুষ থেকে শুরূ
করে সমগ্র জীবকুল এই চারটি বিশেষ
উপাদানের ভিন্ন ভিন্ন বিন্যাস মাত্র।
যেখানে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জীর
মধ্যে genetic ব্যবধান মাত্র ১-২% অথচ
শিম্পাঞ্জি শিম্পাঞ্জিই থেকে গেল
আর আমরা হয়ে গেলাম সৃষ্টির
সেরা আশরাফুল মাখলুকাত। নিশ্চয় এ
সৃষ্টি রহস্যের মাঝে রয়েছে সেই মহান
কারিগরের হাত যিনি সামান্যতম
ব্যবধান তৈরী করে হাজার হাজার
বৈচিত্র্যময় প্রানীকুল তৈরি করেছেন।
বিজ্ঞানের ভাষায়
যাকে আমরা বিবর্তন
বলে জানি এবং ধরে নিয়েছি প্রকৃতির
সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্যই
প্রানীকুলের এই বৈচিত্র্যতা কিন্তু
এটাও কি করে অস্বীকার করি যে এই
বৈচিত্র্যতা আনার পিছনে হয়ত
রয়েছে সেই মহান সত্বার হুকুম যার
নিদর্শনায় ও ইচ্ছাতেই পরিচালিত
হচ্ছে এই বিবর্তন।
শেষ করছি আরো একটি রেফারেন্স
দিয়ে। আল
কুরআনে সুরা বাকারা আয়াত ৬৫-৬৬
এবং সুরা আরাফ আয়াত ১৬৩-১৬৬
তে বর্ননা করা হয়েছে এমন এক
সম্প্রদায়ের কথা যারা আল্লাহর
নির্দেশনাকে অগ্রাহ্য করার
কারনে আল্লাহ তাদের দেহগঠন
পরিবর্তন করে বানরে রূপান্তর করে দেন।
সুতরাং মানব
সৃষ্টি প্রক্রিয়া কিংবা বানর
থেকে মানুষ নাকি মানুষ থেকে বানর
এটি একটি অমিমাংসিত বিষয়
যা বিবর্তনবাদ ও ধর্মের দৃষ্টিকোন
থেকে একই সাথে ব্যাখ্যা করা যায়
না।

জীবনের উৎপত্তি ও বিবর্তন





জীবনের উৎপত্তি ও বিবর্তন


আধুনিক জীববিজ্ঞান বলে, কোষ হচ্ছে জীবনের মূল একক, আর জীন হল বংশগতিবিদ্যার মূল একক। আর বিবর্তন হল একমাত্র প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে নতুন প্রজাতির জীব সৃষ্টি হয়। বিবর্তনে একমাত্র প্রধান কারণ হচ্ছে অভিযোজন ক্ষমতার ত্রুটিপূর্ণ আচরণ। তবে জীব-রসায়নও কম দায়ী নয়। আসলে জীবদহে প্রতিনিয়ত চলছে  Carmichael reaction যার ফল সরুপ পরিবর্তত হচ্ছে জিনোমের সিকুয়েন্স। আসলে জীব রসায়ন বা প্রাণরসায়ন হচ্ছে জীবনের  রসায়ন নিয়ে  বিজ্ঞানের যে শাখায় আলোচনা, পর্যালোচনা, গবেষণা করা হয় তাই হল প্রাণরসায়ন বা জীবরসায়ন।

উদ্ভিদবিজ্ঞান বা উদ্ভিদ-জীববিদ্যা হচ্ছে জীববিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যা জীবন্ত ও জীবাশ্ম  উদ্ভিদ নিয়ে বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষণ সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। আণবিক জীববিজ্ঞান এমন শাখা যেখানে সমস্ত জীবিত বস্তুর প্রধানতম অণুসমূহ যথা নিউক্লিয়িক অ্যাসিড ও প্রোটিন-এর গঠন ও কাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।যার থেকে বেরিয়ে আসে নতুন ভেরিয়েশনের জিনতাত্বিক নতুন বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্য।  জীববিজ্ঞান একটি উপশাখা যেখানে প্রজাতির উৎপত্তি ও ক্রমবিবর্তন নিয়ে গবেষণা করা হয়। আর যেখানে জীবিত অর্গানিজমের বিস্তৃতি, বিন্যাস ও প্রাচুর্য এবং এসব অর্গানিজমের মধ্যে আন্তঃক্রিয়া ও পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের সাথে এদের অন্ত:ক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয় তাই পরিবেশবিজ্ঞান।আণবিক জীববিজ্ঞান, যাতে জীবপদার্থবিজ্ঞান ও জীবরসায়ন অন্তর্গত শাখা থেকে আধুনিক জীববিজ্ঞানের সবচেয়ে মৌলিক অবদানগুলি এসেছে। সমস্ত জীবিত বস্তুর প্রধানতম অণুসমূহ যথা নিউক্লিয়িক অ্যাসিড ও প্রোটিন -এর গঠন ও কাজ সম্পর্কে এখন আমরা অনেক কিছু জানি। বংশগতির কৌশল নির্ধারণ ছিল আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান আবিষ্কার।১৯৭০-এর দশকে এসে জীববিজ্ঞানের একটি অন্যতম প্রধান শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শাখার কেন্দ্রীয় শাস্ত্র হল বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞান, যাতে বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের অবদান বহুদিন পরে যথাযথ মর্যাদা পায়। জীবসমষ্টি বংশগতিবিদ্যা (Population genetics), যেখানে জীবসমষ্টিগুলির ভেতরে জীনের পরিবর্তন গবেষণা করা হয়, এবং বাস্তুবিজ্ঞান, যেখানে প্রাকৃতিক আবাসস্থলে জীবসমষ্টির আচরণ গবেষণা করা হয়, ১৯৩০ -এর দশক থেকে শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী ও দার্শনিক চার্লস রবার্ট ডারউইনের দ্বি-শততম জন্মবর্ষ
বৈজ্ঞানিক চিন্তার বিভিন্ন অঙ্গনে উনিশ শতকে যে সব তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়, বিবর্তনবাদ তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম। বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্মতাত্ত্বিক দর্শন অনুসারে অনাদি অনন্তকাল থেকে বিরাজমান পরমেশ্বর এক আদেশবলে সৃষ্টি করেন এ জগৎ ও জীবকুল। যেমন, উপনিষদে আছে পরমেশ্বর চিন্তা করলেন ‘একেলা ন রমেত’ (আমি আর একা থাকব না), এক থেকে বহু সৃষ্টি করবো। ফলে তৎক্ষণাৎ সৃষ্টি হলো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। ইহুদি ও খিস্টীয় ধর্ম মতেও এ ধারণার সমর্থন রয়েছে। যেমন, স্রষ্টার ইচ্ছা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে সমস্ত জগৎসংসার। এ কাহিনী বিবৃত বাইবেলের আদি পর্বে। ওখানে বলা হয়েছে ঈশ্বরের ইচ্ছায় শূন্য থেকে প্রথমে আলোর এবং তার পর ছ’দিন ধরে ক্রমান্বয়ে গ্রহ নক্ষত্র উদ্ভিদ প্রাণী এবং সর্বশেষে আদিমানব আদমের সৃষ্টি। আদমের অস্থিপঞ্জর থেকে সৃষ্টি করা হয় ঈভ বা হাওয়াকে। ছ’দিনে সৃষ্টিকর্ম সম্পন্ন করে সপ্তম দিনে ঈশ্বর বিশ্রাম নেন। সেদিনের স্মরণেই খ্রিস্টানরা রবিবারে সাপ্তাহিক বিশ্রাম নেয়।
বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তির অনুপস্থিতিতে এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রাধান্যের ফলে মধ্যযুগে অবশ্য জগৎকে ব্যাখ্যা করা হয় স্থির নিশ্চল বলে। কিন্তু আধুনিক যুগে বিবর্তনের ধারণা আবার নতুন করে বিস্তার লাভ করে। যেমন, ডেকার্ট (১৫৯৬-১৬৫০), লাইবনিজ (১৬৪৬-১৭১৬) ও কান্ট (১৭২৪-১৮০৪) প্রমুখ আধুনিক দার্শনিকদের চিন্তায় বিবর্তনের ধারণা কোন না কোনোভাবে উপস্থিত ছিল। পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনের মাধ্যমে প্রাণীকুল কীভাবে নিম্নতর পর্যায় থেকে ক্রমশ উচ্চতর পর্যায়ে বিবর্তিত হয়ে থাকে, এ ব্যাপারে ফরাসী প্রকৃতিবাদী দার্শনিক ল্যামার্ক (১৭৪৪-১৮২৯) বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। এসব মতের সূত্র ধরেই জীব ও জগতের বিবর্তন ব্যাখ্যায় অগ্রসর হলেন বিশিষ্ট ব্রিটিশ বিবর্তনবাদী চিন্তাবিদ চার্লস ডারউইন (১৮০৯-৮২)।
কিন্তু আধুনিক জীববিজ্ঞান এই আকস্মিক সৃষ্টিবাদের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে এবং এর স্থলে প্রবর্তন করে বিবর্তন বা ক্রমবিকাশের ধারণা। এ মতে, জগৎ ও জীবনে প্রতিনিয়ত যে সব ঘটনা ঘটে সেগুলোর কোনোটিই সম্পূর্ণ নতুন নয়; প্রতিটি ঘটনাই তার পূর্ববর্তী ঘটনা ক্রমবিকাশের ফল। জগতের অগণ্য জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ তথা সব জৈব ও অজৈব সত্তা এক সহজ সরল আদিম অবস্থা থেকে ক্রমবিকশিত হয়ে চলেছে বিরামহীনভাবে। পরিবেশ  ক্রমশ অনুকূল হয়ে ওঠে এবং আর্বিভাব ঘটে রকমারি রাসায়নিক পদার্থের। এ প্রক্রিয়ায়ই উপযুক্ত আবহাওয়া, বায়ু ও পানির আবির্ভাবের ফলে ক্রমশ উদ্ভব ঘটে উদ্ভিদ ও বিভিন্ন প্রাণীর। শুরুতে মূল পদার্থিক ও রাসায়নিক উপাদানগুলো ছিল সরল কিন্তু এলোমেলো অবস্থায়। বিবর্তন প্রক্রিয়ায় আস্তে আস্তে এগুলো সুশৃঙ্খল জটিল রূপ ধারণ করতে থাকে। বিবর্তন মানে সরল থেকে যৌগিক, বিশৃঙ্খল থেকে সুশৃঙ্খল এবং অনুন্নত থেকে উন্নত অবস্থায় ক্রমিক বিকাশ বা উত্তরণ। এ বিবর্তন ধারার বিভিন্ন স্তর পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়, বরং ধারাবাহিক অনবচ্ছিন্ন। জগতের সবকিছুই প্রবহমান ও পরিবর্তনশীল। এখানকার কোনোকিছুই সম্পূর্ণ নতুন নয়, সবই পূর্ববর্তী বস্তু ও ঘটনার ক্রমবিকাশের ফল। বিবর্তনবাদের এ বক্তব্য ব্যাপক সমর্থন ও জনপ্রিয়তা লাভ করে উনিশ শতকে। তখন থেকে সৃষ্টিবাদের শক্তি হ্রাস পেতে থাকে। মানুষসহ বিভিন্ন জীবজন্তু কীভাবে বিবর্তিত হয় তার এক চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন চার্লস ডারউইন। বিবর্তনবাদে ডারউইনের অবদান প্রধানত জীবজগৎকে কেন্দ্র করে। শৈশব থেকেই উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের প্রতি তিনি বিশেষভাবে আকৃষ্ট ছিলেন। পরবর্তীকালে তিন পড়াশোনাও করেন। এ বিষয়েই। ছাত্রজীবন শেষ করে যখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন, তখন একদিন তার পছন্দ করা বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করার এক বিরাট সুযোগ আসে। এইচএমএস বিগল নামক একটি জাহাজ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান কাজে বিশ্বপরিক্রমায় বের হয় এবং ডারউইন তাতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানী হিসাবে একটি চাকরি পান। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ঐ জাহাজে করে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত জৈব উপাত্ত নিয়ে তিনি গবেষণা শুরু করেন।বিবর্তন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করেন । ডারউইনের মতে, পৃথিবীর জীবজন্তু বর্তমানে যে যে অবস্থায় আছে, শুরুতে সে অবস্থায় ছিল না। এক আদিম অপরিপক্ক অবস্থা তেকে ক্রমিক বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তারা বর্তমানের অপেক্ষাকৃত জটিল অবস্থায় উপনীত হয়েছে। প্রকৃতি এক বিরামহীন সংগ্রামে নিয়োজিত। যারা সর্বাধিক যোগ্য তারাই এ জীবন সংগ্রামে টিকে থাকে। যারা দুর্বল এবং যারা পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে অক্ষম, তাদের বিলুুপ্তি অনিবার্য।
এ মতবাদের মূল অর্থ এখন আমাদের কাছে পরিষ্কার। যে বিবর্তন-প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রজাতি বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে, মানবজাতিও তার অন্তর্ভুক্ত। মানুষের মধ্যেও বেঁচে থাকার সংগ্রাম অব্যাহত এবং মানুষের বেলায়ও শক্তিশালীরাই সংগ্রাম জয়ী হয়। এবং এ বিবর্তন-প্রক্রিয়ায় মানুষের দৈহিক ও মানসিক প্রকৃতিতেও বিরাট পরিবর্তন ঘটে থাকে চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে। ডারউইন এই নিশ্চিন্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হব যে, মানুষ এক বানর ও মানুষের মধ্যে যে পার্থক্য লক্ষণীয়, তার মূলেও রয়েছে সর্বজনীন বিবর্তননীতির প্রভাব। বেঁচে থাকার সংগ্রামের অভিজ্ঞতার ফলে মানুষের চিন্তা ও বুদ্ধিতে এমন অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, যার ফলে সে পবিেশের প্রতিকূলতার মোকাবেলা করে জয়ী হতে পেরেছে।
কোপারনিকাস ও গ্যালিলিও পৃথিবীকে বিশ্বের কেন্দ্রীয় অবস্থান থেকে সরিয়ে এবং সৌরজগতের এটি গ্রহে পরিণত করে মানুষকে যেমন সব রকমের জ্যোতির্বিদ্যাকে কেন্দ্র্রিয়তা ও গুরুত্ব থেকে বঞ্চিত করেছিলেন, ডারউইন তাঁর বিবর্তনবাদেও তেমনি অপরাপর যেকোনো প্রাণীর ন্যায় মানুষও এক আদি সরল অবস্থা থেকে উদ্ভূত এবং অন্যান্য প্রজাতির ন্যায় মানুষও ক্রমিক বিবর্তনের মধ্যমে তার নিজস্ব চেষ্টায় বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে।
বলা বাহুল্য, ডারউইনের বিবর্তনবাদী মত খ্রিস্টধর্মে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বেও বিরোধী। ডারউইনের মতে, জগতে মানুষের কোনো বিশেষ সুুবিধাজনক অবস্থান নেই, এবং জাগতিক ব্যাপারে বিধাতার হস্তক্ষেপের প্রশ্ন ওঠে না। এ মতের প্রভাব বাইবেল বর্ণিত অলৌকিক ঘটনাবলী সম্বন্ধে অনেকেই স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শুরু করে এবং এভাবে ধর্মীয় ব্যাপারাদি নিয়ে জনমনে সংশয়ের সৃষ্টি হয়। ডারউইনেরও প্রায় তিনশো বছর আগে কোপারনিকাস ও গ্যালিলিও প্রমুখ বিজ্ঞানী নতুন ধর্মবিরুদ্ধ মত প্রচার করে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ মত নিয়ে তুমুল মতবিরোধ সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এর তীব্র নিন্দা করে।
তবে ডারউইনের সময় থেকে বিজ্ঞানীরা যেসব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন তাতে বিবর্তনবাদী অনুমান সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং বিজ্ঞানীরা আজ সাধারণভাবে এ মতকে সত্য বলে গ্রহণও করেছেন। কোপারনিকাসের জ্যোতির্বিদ্যা যেমন এর ঘোষণার পঁচাত্তর বছর পরে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল, ঠিক তেমনি আজকের দিনের মানুষও ডারউইনের মতকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছে। তবে একথা ঠিক যে, কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক মত আর ডারউইনের জৈব বিবর্তনবাদ, এ দুয়ের কোনোটিই আজও সব মহলে সমানভাবে গৃহীত ও আদৃত নয়। তাই দেখা যায়, বিবর্তনের গোটা ধারণাটিকেই আজও কেউ কেউ সংশয়ের দৃষ্টিতে দেখে থাকেন।
বিবর্তনবাদ আজ একটি প্রতিষ্ঠিত মতবাদ। আর এর পেছনে বৈজ্ঞানিক যুক্তি-প্রমাণও রয়েছে প্রচুর। এ মত জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভূবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান প্রভৃতি বিজ্ঞানের গবেষণালব্ধ যুক্তিপ্রমাণ দ্বারা সমর্থিত। জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষণা থেকে জানা যায় যে, সৌরমন্ডল ও নক্ষত্রপুঞ্জের বর্তমান অবস্থা লক্ষ-কোটি বছরের ক্রমবিবর্তনের ফল। সূর্য ও অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহের শক্ত হওয়ার এবং পৃথিবীর একটা নিরেট অবস্থা ধারণের এবং পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা ও লোকালয় গড়ে ওঠার জন্য সুদীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন ছিল। মাটির বিভিন্ন স্তর পরীক্ষা করে ভূবিজ্ঞানীরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, আমাদের এই ধরিত্রী একটি আদিম তরল অগ্নিময় অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান কঠিন অবস্থা ধারনা করেছে।
মাটির নিচের বিভিন্ন ভূস্তরে কিছু অধুনালুপ্ত প্রাচীন জীবের শিলীভূত নিদর্শন পাওয়া গেছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, বর্তমান প্রাণীকুল সেসব প্রাচীন প্রাণীরই বিবর্তিত রূপ। আধুনিক জীববিজ্ঞানের ভাষাও অনুরূপ। বর্তমানে আমরা যেসব জীবজন্তু দেখছি তাদের উৎপত্তি আদিকালের জীবজন্তু থেকে। সেদিনের জীবজন্তু ছিল ভিন্নতর আকার ও অবয়বের, এবং তারা বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করেছে ক্রমিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে। মানুষের বেলায়ও ঠিক একই কথা প্রযোজ্য। বর্তমানে আমরা মানবজাতির যে অবস্থা দেখছি তা হঠাৎ করে এই রূপ ধারণ করেনি। এখন আমরা মানুষের যেরকম দেহ ও মন প্রত্যক্ষ করছি, আদিযুগের মানুষের দেহ ও মন তেমনটি ছিল না। কোনো জীবজন্তুই সবসময় একরকম থাকে না। জীবজগতের বিভিন্ন জাতি-প্রজাতি যেমন চিরকাল এক অবস্থায় থাকে না, তেমনি সমাজ ও সামাজিক অনুশাসনও পূর্বাপর একরকম থাকে না। সমাজবিজ্ঞানীর মতে, মানুষের যেসব সামাজিক রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান, মূল্যমান ও মূল্যবোধ সেগুলোও এক ক্রমিক পরিবর্তনধারা বা ক্রমবিকাশের ফল।
বিবর্তনের মূল প্রকল্পটিতেও ডারউইনের সময় থেকে ক্রমশ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। জীবনসংগ্রাম ও যোগ্যতমের টিকে থাকার মাধ্যমে বিবর্তনকে সুষ্ঠুভাবে ব্যাখ্যা করা যায় কি না এবং বিবর্তন ব্যাখ্যায় অন্য কেনো নতুন কিছু অবতারণার প্রয়োজন আছে কি না, এ নিয়ে আজও প্রশ্ন উঠেছে। বিবর্তনের নিরবচ্ছিন্নতা সম্বন্ধেও কেউ-কেউ যুক্তি দিয়ে বলেছেন যে, বিবর্তন-প্রক্রিয়া সুসংবদ্ধ ও ক্রমিক অগ্রগতির নির্দেশক নয়, বরং এর মধ্যে প্রায়শই এমন কিছু আকস্মিক পরিবর্তন দেখা যায় যেগুলো বিবর্তনের ক্রমিক ও ধারাবাহিক বৈশিষ্ট্যকে বিঘ্নিত করে।
যাইহোক, জগৎ ও জীবনকুলের বিবর্তনাবাদী ব্যাখ্যা ধর্ম ও বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানের বেলায় সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছে। বিশেষ করে, নীতিবিদ্যার চিন্তা-ভাবনা ও ধ্যান-ধারণায় বিবর্তনবাদের প্রভাব যুগান্তকারী। এ মতে, অতীতের নীতিবিদরা যেসব স্থির ও অপরিবর্তনীয় বিধি-নিয়মের কথা বলেছিলেন সেগুলো আসলে তেমন নয়। যেমন, কান্টের দৃষ্টিতে যেসব নৈতিক নিয়মছিল অপরিবর্তনীয় ও প্রাকসিদ্ধ বিবর্তনবাদের প্রভাবে সেগুলোকে দেখা হয় স্বাভাবিক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ফলশ্রুতি হিসেবে। বিবর্তনবাদের প্রভাবে অনপেক্ষ নৈতিক বিশ্বাসের স্থলে আপেক্ষিকতা ক্রমবর্ধমানা গুরুত্ব লাভ করতে পারে। জীবনসংগ্রাম, প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং সবচেয়ে উপযুক্তদের বেঁচে থাকার ডারউইনীয় ধারণা শিক্ষিত মহলে ক্রমশ জনপ্রিয় হতে থাকে। তখন এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে ওঠে যে, মানুষসহ সব জীবজন্তুই প্রাকৃতিক কার্যকারণ নিয়মের আওতাধীন, এবং এ নিয়মেই তারা কোনো চেতন সত্তা কিংবা ঈশ্বরের সাহায্য ছাড়াই ক্রমবিকশিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে। এ মতে, মানুষের আচরণের শুভাশুভ বিচারের মানদণ্ড খুঁজতে হবে প্রকৃতিজগতেই, কোনো অজানা অচেনা অতিপ্রাকৃত সত্তায় নয়। নৈতিক মূল্যবোধকেও বিচার করতে হবে প্রচলিত প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমেই।
জগতের এই নতুন বিবর্তনবাদী ব্যাখ্যা একদিকে কর্মের ক্ষেত্রে, অন্যদিকে সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের বেলায় সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে। এর ফলে অর্থনীতির পাঠ ও গবেষণায় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানাদির বিকাশের ওপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করা হয়, এবং আঠারো শতকের অর্থনীতিবিদেরা যেসব স্থির ও অপরিবর্তনীয় নিয়মের কথা বলেছিলেন সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। এক কথায় অর্থনীতিকে মাটির পৃথিবীতে নামিয়ে এনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের আওতাভুক্ত করা হয়। নীতিবিদ্যার ক্ষেত্রের অনুরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। কান্টের দৃষ্টিতে যেসব নিয়ম ছিল অপরিবর্তনীয়, বিবর্তনবাদের প্রভাবে তাদের দেখা হয় ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ফলশ্রুতি হিসাবে। অনপেক্ষ নৈতিক বিশ্বাসের স্থলে আপেক্ষিকতার ক্রমবর্ধমান গুরুত্বলাভ করে।
বিবর্তনবাদ ঐতিহাসিক অনুসন্ধান ও গবেষণাকে উৎসাহিত করে। ইতিহাসকে মনে করা হয় সেসব মানুষের মনের চাবিকাঠি হিসাবে যারা বস্তু ও ঘটনাকে দেখেন তাদের উৎপত্তি ও বিকাশের দৃষ্টিকোণ থেকে। উনিশ শতকের ইতিহাসবিদরা যখন পুরোপুরি বস্তুনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করলেন এবং মানুষ ও তার প্রতিষ্ঠানাদির বিবেচনায় ডারউইনের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুকরণ করলেন, তখনই সম্পূর্ণ হলো অতিপ্রাকৃতের অক্টোপাস থেকে ইতিহাসকে মুক্ত করার প্রক্রিয়া। সমাজবিজ্ঞানের পাঠ ও অধ্যয়নেও বিবর্তনবাদ সৃষ্টি করে এক নতুন প্রেরণা। প্রাণীদেহের গতিপ্রকৃতি যেমন তাদের পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, মানুষকেও তেমনি দেখা হলো সামাজিক প্রতিষ্ঠানাদির অংশ হিসাবে। সমাজবিজ্ঞানীরা ক্রমশ উপলব্ধি করলেন যে, এসব প্রতিষ্ঠান এক অবিরাম পরিবর্তনধারার অধীন। এরা স্থির হয়ে নেই; সুতরাং সমাজবিজ্ঞানে অনপেক্ষ নিয়মের কোনো স্থান নেই। আমরা শুধু সমাজের বর্ণনা ও শ্রেণীবিভাগ করতে পারি, কিন্তু কোনো অবস্থায়ই পূর্ণাঙ্গতার দাবি করতে পারি না।!