শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫

বানর থেকে মানুষ নাকি মানুষ থেকে বানর

  • ""বানর থেকে মানুষ নাকি মানুষ থেকে বানর ""
  •  পুরাতন বিতর্কের নতুন যুক্তি 


পৃথিবীর বয়স আনুমানিক ৪০০০মিলিয়ন বছর।পৃথিবীতে সরল প্রাণীকোষের আবির্ভাব ঘটেছিল প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে।তবে এখানে আধুনিক মানুষের বসবাসের ইতিহাস মাত্র দুই লাখ বছরের। এতে স্পষ্ট যে বুদ্ধিমান প্রাণের বিকাশের জন্য অনেক লম্বা সময় প্রয়োজন পরেছে।আর এরও দুই কোটি বছর আগে উৎপত্তি ঘটে বানরের।ধারনা করা হয় বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বানর থেকে মানুষ হতে সময় লেগেছে প্রায় দুই কোটি বছর।
এই বিবর্তন বাদের ব্যাখ্যা একটু অন্য ধরনেরছোটবেলায় যখন বিবর্তন প্রথম
জানতে পারলাম
আমাদেরকে এভাবে বুঝানো হল..
একটা গাছ ছিল এ রকম  যার ফল পানিতে
পড়লে হাঁস, ডাংগায় পড়লে মেষ,আর পড়ার
আগে অংকুরিত হলে বকে পরিণত হত। একইভাবে..... 
বানররা গাছে গাছে ঝুলত আর
লাফিয়ে লাফিয়ে একডাল
থেকে আরেকডালে যেত।
এভাবে লাফাতে লাফাতে একদিন
হাত ফসকে নিচে পড়ে যায়।
মাটিতে পড়ে গিয়ে দেখল
হাটাচলা করাও খুব একটা মন্দ না। তাই
মাঝেমাঝে সে এই প্রাকটিস
করতে থাকল। দুই পা দিয়ে হাটার
কারনে তার লেজ
মাটিতে ঘষা খেতে খেতে ক্ষয়
হতে লাগল। আর এভাবে ক্ষয়
হতে হতে সে একদিন লেজ বিহীন
মানুষে পরিনত হয়ে গেল।এ কথা বলার কারন হচ্ছে আদি মানবের(বন মানুষ)
পায়ের গোড়ালির হাড় ছিল বাকা। যা হাটাচলার পরিবর্তে গাছে উঠবার উপযোগী ছিল।
যা বানরের বৈশিষ্ট্যময়।
কিন্তু বিজ্ঞান এবং ধর্মকি এই থিওরকে বিশ্বাস কর আসুন জেনে নেই,,,,,,
প্রথমে বিজ্ঞান দিয়েই চিন্তা করা যাক।
চার্লস ডারউইনের Origin of species by means
of natural selection থিওরি আজ
প্রানীবিজ্ঞানী, জীনগবেষক ও
বিবর্তন গবেষকদের কাছে অনেকটাই
গ্রহনযোগ্য মতবাদ।
বিশেষ করে DNA Sequence শুরু হবার পর
থেকে বিজ্ঞানীরা অনেকটাই
নিশ্চন্ত যে বিবর্তনের মাধ্যমেই
পৃথিবীতে বিচিত্র সব প্রানীকুলের
উদ্ভব হয়েছে। যার মধ্যে পৃথিবীর
সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রানী মানুষও
অন্তর্ভুক্ত।
ধারনা করা হয় যে সকল চার হাত
পা বিশিষ্ট প্রানীর
উৎপত্তি হয়েছে মাছ থেকে। বিবর্তনের
এই ধারাবাহিকতায়
বর্তমানে বৈশিষ্ট্যগত দিক
থেকে মানুষের নিকটবর্তী প্রানী হল
শিম্পাঞ্জী বা বানর। কিন্তু মাছ থেকেই উৎপত্তি ঘটেছে মানুষের। তাহলে
কিভাবে??
ধারনা করা হয় ৩৫০ মিলিয়ন বছর
আগে মাছ একধরনের প্রেডিয়েটরের
অাক্রমনের শিকার হয়। সেই অাক্রমন
থেকে বাঁচতে ও নিজেদের অস্তিত্ব
রক্ষার্থে তারা বাধ্য হয় জলভাগ
ছেড়ে স্হলভাগে অাশ্রয় নিতে।
ধাপেধাপে স্হলভাগে বসবাসের জন্য
তাদের ফুলকা বিবর্তনের বিভিন্ন
পর্যায় অতিক্রম
করে করে ফুসফুসে রূপান্তরিত হয়। সেই
সাথে স্হলভাগে চলাফেরার জন্য
তাদের হাত ও
পা গজিয়ে তারা স্হলভাগের
প্রানীতে রূপান্তরিত হয়।
তবে বিবর্তনবাদের সংঙ্গা টি হচ্ছে"ডারউইনের মতে প্রকৃতি এই পরিবর্তন
আনে যেন ঐ প্রানী সেই
পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। এটাই
বিবর্তনবাদ বা theory of evolution.
সেখান থেকেই বলা হয়েছে পৃথিবীর
সমস্ত চার হাত পা বিশিষ্ট
প্রানী এমনকি মানুষের
উৎপত্তি হয়েছে মাছ থেকে! তবে মাছ না বানর সন্দেহ থেকে যায় সকলের আর তা দুর করার জন্য ২০০৩ সালে যখন Human genome sequence
করা হল এবং তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট
প্রকাশ করা হল তখন
বিজ্ঞানীরা অারো বেশী অাশ্চর্ষ
হলেন। দেখা গেল শুধু
শিম্পাঞ্জি না এমনকি মুরগীর সাথেও
মানুষের জিনগত মিল রয়েছে।
যা মুটামুটি ভাবে বিতর্কিত একটি ঘটনা তবে কি মানব সৃষ্টিরহস্য জনা যাবে না কখনও।
হতাশ হওয়ার কারন নেই আসুন এবার বিবর্তনবাদের কথা বাদ দিয়ে দেখি পবিত্র কোরআন সহ অনান্য পবিত্র ধর্মগ্রন্থ সমূজে মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে কি বলা হয়েছে।
সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ﻛُﻞَّ ﺷَﻲْﺀٍ ﺣَﻲٍّ ‘আর প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হ’তে’ (আম্বিয়া ২১/৩০) ।
গবেষণায় দেখা যায় সাগরের অভ্যন্তরের পানিতে যে প্রোটোপ্লাজম বা জীবনের আদিম মূলীভূত উপাদান রয়েছে তা থেকেই সকল জীবের সৃষ্টি। আবার সকল জীবদেহ কোষ দ্বারা গঠিত। আর এই কোষ গঠনের মূল উপাদান হচ্ছে পানি।
মহান আল্লাহর ভাষায়, ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺇِﻧَّﺎ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎﻛُﻢْ ﻣِﻦْ ﺫَﻛَﺮٍ ﻭَﺃُﻧْﺜَﻰ ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻛُﻢْ ﺷُﻌُﻮْﺑًﺎ ﻭَﻗَﺒَﺎﺋِﻞَ ﻟِﺘَﻌَﺎﺭَﻓُﻮْﺍ ‘হে মানবমন্ডলী! আমরা তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদেরকে বিভিন্ন বংশ ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা পরস্পরে পরিচিতি লাভ করতে পার’ (হুজুরাত ৪৯/১৩) ।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে ‘মানব ক্লোন’। এই ক্লোন পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দিতে গেলে পুরুষের জীব কোষের প্রয়োজন। অর্থাৎ একজন পুরুষের জীব কোষ বা শুক্রাণু ব্যতীত একজন নারী সন্তান জন্ম দানে অক্ষম।
এছাড়াও হিন্দু ধর্মগ্রন্থ
ভ্রম্মাপুরানে বলা হয়েছে ভ্রম্মা (ভগবান)
মানব ও মানবীর আকৃতি প্রদান করেন।
নর
মানবকে বলা হয় স্বয়ম্ভু মানু আর
নারী স্বতরূপা। মানবকুলের
উৎপত্তি হয়েছে মানু থেকে।
Jewish Bible Genesis chapter 2:7 এবং chapter
1:26 এ বলা হয়েছে God তৈরী করলেন
মানব মাটি থেকে এবং তার
নাসিকাতে ফু দিলেন যার ফলে তার
মাঝে প্রানের উদ্ভব হল।
আরো বলা হয়েছে God নিজ
আকৃতিতে মানব সৃষ্টি করেছেন এবং জল,
বায়ু, স্হল ও পৃথিবীতে বিদ্যমান সমস্ত
প্রানীর উপর তাকে অাধিপত্য দান
করেছেন।
খ্রিষ্টীয় বাইবেল Corinthians chapter 15:22
& 15:45 একই ভাবে Adam এর
দেহে প্রানের সঞ্চারের
কথা বলা হয়েছে। তাছারা New
Testament এ Genesis এর chapter এর
উদৃত্তি দেয়া হয়েছে।
একইভাবে সর্বশেষ ধর্মগ্রন্থ আল
কোরআনের chapter 2:30-39, chapter 7:19-25,
chapter 20:116-126 এই সবগুলো chapter এ আরও
বিস্তারিত ভাবে মানুষের সৃষ্টি,
তাদের প্রথম অবস্থান ও
পৃথিবীতে অার্বিভাব
বর্ননা করা হয়েছে।
বিজ্ঞানের
কল্যানে আমরা জানি যে DNA এর
মাঝে লুকিয়ে আছে সব প্রানীকুলের
গঠনকৌশল যা মুলত চারটি বিশেষ
উপাদান দিয়ে তৈরী। মানুষ থেকে শুরূ
করে সমগ্র জীবকুল এই চারটি বিশেষ
উপাদানের ভিন্ন ভিন্ন বিন্যাস মাত্র।
যেখানে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জীর
মধ্যে genetic ব্যবধান মাত্র ১-২% অথচ
শিম্পাঞ্জি শিম্পাঞ্জিই থেকে গেল
আর আমরা হয়ে গেলাম সৃষ্টির
সেরা আশরাফুল মাখলুকাত। নিশ্চয় এ
সৃষ্টি রহস্যের মাঝে রয়েছে সেই মহান
কারিগরের হাত যিনি সামান্যতম
ব্যবধান তৈরী করে হাজার হাজার
বৈচিত্র্যময় প্রানীকুল তৈরি করেছেন।
বিজ্ঞানের ভাষায়
যাকে আমরা বিবর্তন
বলে জানি এবং ধরে নিয়েছি প্রকৃতির
সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্যই
প্রানীকুলের এই বৈচিত্র্যতা কিন্তু
এটাও কি করে অস্বীকার করি যে এই
বৈচিত্র্যতা আনার পিছনে হয়ত
রয়েছে সেই মহান সত্বার হুকুম যার
নিদর্শনায় ও ইচ্ছাতেই পরিচালিত
হচ্ছে এই বিবর্তন।
শেষ করছি আরো একটি রেফারেন্স
দিয়ে। আল
কুরআনে সুরা বাকারা আয়াত ৬৫-৬৬
এবং সুরা আরাফ আয়াত ১৬৩-১৬৬
তে বর্ননা করা হয়েছে এমন এক
সম্প্রদায়ের কথা যারা আল্লাহর
নির্দেশনাকে অগ্রাহ্য করার
কারনে আল্লাহ তাদের দেহগঠন
পরিবর্তন করে বানরে রূপান্তর করে দেন।
সুতরাং মানব
সৃষ্টি প্রক্রিয়া কিংবা বানর
থেকে মানুষ নাকি মানুষ থেকে বানর
এটি একটি অমিমাংসিত বিষয়
যা বিবর্তনবাদ ও ধর্মের দৃষ্টিকোন
থেকে একই সাথে ব্যাখ্যা করা যায়
না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন